নিবন্ধন করেও অপেক্ষায় ১ কোটি ৭২ লাখ মানুষ

0
82

রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করেন গত ৯ জুলাই। নিবন্ধনের সময় টিকাকেন্দ্র নির্ধারণ করেন কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল। এরপর ৪১ দিন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু কবে টিকা পাবেন, সে বার্তা (এসএমএস) এখনো পাননি।

এই হাসপাতালে নিবন্ধন করে টিকার অপেক্ষায় রয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার জন। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক শিহাব উদ্দিন বলেন, সক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি নিবন্ধন হয়ে গেছে। হাসপাতালের ছয়টি বুথে দৈনিক প্রায় দেড় হাজার টিকা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে অর্ধেক পাচ্ছেন প্রথম ডোজের টিকা, বাকিরা দ্বিতীয় ডোজ। এই হারে নিবন্ধিত সবাইকে টিকা দিতে হলে আট–নয় মাস লাগবে।নিবন্ধন করে অপেক্ষায় থাকা মানুষের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। ৫ আগস্ট টিকার অপেক্ষায় ছিলেন প্রায় ৭৫ লাখ মানুষ। আর গত মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) পর্যন্ত নিবন্ধন করে টিকার অপেক্ষায় থাকা মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি ৭২ লাখ। অর্থাৎ মাত্র ১২ দিনের ব্যবধানে টিকার জন্য অপেক্ষমাণ মানুষ বেড়েছে প্রায় এক কোটি। তাঁদের অনেকে এক–দেড় মাস আগে নিবন্ধন করেও এখনো কোনো বার্তা পাননি।

রাজধানীর চারটি কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি কেন্দ্রের টিকা দেওয়ার সক্ষমতা যদি হয় দেড় হাজার, তাহলে তার প্রায় অর্ধেক চলে যায় দ্বিতীয় ডোজ দিতে গিয়ে। দৈনিক টিকাদানের সক্ষমতা না বাড়িয়ে নিবন্ধন চলমান রাখলে অপেক্ষমাণ তালিকা দীর্ঘ হতেই থাকবে।

ঢাকা ডেন্টাল কলেজ কেন্দ্রে টিকা দিতে ৮ জুলাই নিবন্ধন করেন রাজধানীর পল্লবীর বাসিন্দা নারগিস সুলতানা। গতকাল পর্যন্ত তিনি কোনো বার্তা পাননি। বললেন, ‘টিকা কবে পাব বুঝতে পারছি না। কেন্দ্র থেকে জানিয়েছে, টিকার পেতে নিবন্ধনের বয়সসীমা কমানোয় চাপ বেশি।’১৪ কেন্দ্রে ৩০ হাজারের বেশি অপেক্ষমাণ

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীন ২৭টি কেন্দ্রে গতকাল পর্যন্ত টিকার অপেক্ষায় ছিলেন ৮ লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষ। তাঁদের মধ্যে ১৪টি কেন্দ্রেই অপেক্ষমাণের তালিকা ৩০ হাজারের বেশি। সবচেয়ে বেশি অপেক্ষমাণ ছিল কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯২ হাজারের বেশি মানুষ অপেক্ষায় রয়েছেন ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালে।

নিবন্ধনের পর নিবন্ধনকারীর তথ্য প্রথমে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এরপর কেন্দ্র দৈনিক সক্ষমতা অনুযায়ী মানুষকে টিকা নিতে আসার জন্য খুদে বার্তা পাঠায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সফটওয়্যার ব্যবহার করে বার্তা পাঠানো হয়। কেন্দ্রগুলোর টিকা দেওয়ার সক্ষমতার চেয়ে নিবন্ধন বেশি হওয়ায় জটলা তৈরি হচ্ছে।

রাজধানীর একটি টিকাকেন্দ্রের সমন্বয়ক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, টিকাকেন্দ্রগুলোতে সিনোফার্মের টিকা সরবরাহ করা হচ্ছে খুবই নিয়ন্ত্রিতভাবে। কেন্দ্রগুলোর কাছে খুব বেশি টিকা থাকছে না। তাই চাইলেও এক দিনে খুব বেশিসংখ্যক নিবন্ধনকারীকে টিকা নেওয়ার বার্তা পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার পর্যন্ত টিকা নিতে নিবন্ধন করেছেন ৩ কোটি ২৯ লাখ ৬৮ হাজার ৪৬৬ জন। তাঁদের মধ্যে মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছেন ১ কোটি ৫৭ লাখ ৯৭ হাজার ৯৫৪ জন, দুই ডোজ পেয়েছেন ৫৯ লাখ ৩০ হাজার ১৯৬ জন। শুরুতে টিকার বয়সসীমা ছিল ন্যূনতম ৫৫ বছর। কয়েক দফা কমানোর পর এখন ২৫ বছর বয়সীরাও নিবন্ধন করতে পারছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, একটি কেন্দ্রে টিকা দেওয়ার যে সক্ষমতা, তার চেয়ে এখন নিবন্ধন বেশি হচ্ছে। যাঁ টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন, পর্যায়ক্রমে সবাই পাবেন। ধারাবাহিকতা রক্ষা করে সবাইকে টিকার নেওয়ার বার্তা পাঠানো হচ্ছে।

ঢাকায় নিবন্ধন করা অনেকেই সম্প্রসারিত টিকাদানের সময়ে কেন্দ্রে গিয়ে ফিরে আসেন। খুদে বার্তা না থাকায় তাঁদের টিকা দেওয়া হয়নি।
টিকার জন্য গত ২৩ জুলাই মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতালে নিবন্ধন করেছেন মিরপুরের বাসিন্দা তানজিমা তাবাচ্ছুম। ৭ আগস্ট সম্প্রসারিত টিকাদানের শুরুর দিন ওই কেন্দ্রে গেলেও টিকা নিতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘অনেকে নিবন্ধন ছাড়াই টিকা পেল। আমরা কি নিবন্ধন করে ভুল করলাম? আমি এখন পর্যন্ত টিকার এসএমএস পাইনি।’

করোনা দ্বিতীয় ডোজের জন্য অনেককে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার পরে টিকা কার্ডে দ্বিতীয় ডোজের একটি তারিখ লিখে দেন টিকাদানকারীরা। অনেকেই খুদে বার্তা না পেলেও টিকা কার্ডে উল্লেখিত তারিখে কেন্দ্রে হাজির হচ্ছেন। কিন্তু খুদে বার্তা ছাড়া দ্বিতীয় ডোজের টিকাও দেওয়া হচ্ছে না। ফলে কেন্দ্রে হট্টগোল লাগার ঘটনাও ঘটছে।

করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম বলেন, মানুষ যে নিবন্ধন করেও টিকার জন্য অপেক্ষায় থাকছেন, তা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো না গেলে এই জটলা কমানো সম্ভব হবে না।