সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে বীর চট্টগ্রামে ১৯৯০ সালে বংলাদেশের প্রথম সুদীর্ঘ মানব বন্ধন

0
125

ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন :: জার্মান ভিত্তিক ডি ডব্লিওর (DW) অনলাইন পত্রিকায় গত ১৭ অক্টোবর ২০২১ “দুর্গাপূজায় হামলা: রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা কী?” শিরোনামের একটি প্রবন্ধে বলা হয়েছে “এরশাদের পতনের আগে ২৯ অক্টোবর ভারতের বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছে শিরোনামে খবর ছাপে দৈনিক ইনকিলাব৷ এরপর ৩০ অক্টোবর থেকে পরবর্তী তিন দিন ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে৷ সেসময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সচেতন মানুষের ঐক্যবদ্ধচেষ্টার ফলে সহিংসতা ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে ছড়াতে পারেনি বলে মনে করেন অনেকেই৷ … তবে এবারের কুমিল্লার ঘটনার পর রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো স্পষ্ট ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না৷” মনে পড়ে, ১৯৯০ সালে ভারতের উগ্রবাদীদের হাতে অযোধ্যায় বাবরী মসজিদ ভেংগে রামমন্দিরবানানো নিয়ে সাম্প্রদায়িক হামলা প্রতিরোধে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে প্রথম সেই দলমত নির্বিশেষে পাঁচহাজার মানুষকে নিয়ে দীর্ঘ মানববন্ধন আয়াজন করেছিলাম বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটিরপক্ষে । এরপর ছিলো শহীদ মিনার প্রাংগনে বিশাল সমাবেশ ।১৪ নভেম্বর ১৯৯০ রাতে বিবিসি ও ভয়েসঅব আমেরিকার বাংলা সংবাদে ও ১৫ নভেম্বর ১৯৯০ এর সব পত্রিকায় এর সংবাদ গুরুত্ব সহকারে প্রচারিত হয় . তখন আমি এই কমিটির জন্মলগ্ন থেকে সাধারণ সম্পাদক এবং ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়নের ১৫ দফাদাবীতে সমাবেশ, গণ-অনশন পূর্ণ দিবস ও ৪৮ ঘন্টা হরতাল ইত্যাদির মাধ্যমে এই সংগঠন বিশাল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল মাত্র দুই বছরের মধ্যে । ১৯৮৯ সাল থেকে ভারতে বাবরী মসজিদ ইস্যু নিয়ে উত্তেজনা চলছিলো আর তার প্রভাব এসে পড়েছিল বাংলাদেশে । তখন সম্ভাব্য উগ্র হামলা রোধেআমরা চট্টগ্রামে ঐ সময় সব এলাকায় বিশেষ করে হাজারী লেন, দেওয়ানজী পুকুর পাড়, কালীবাড়ি, কৈবল্লধাম সহ হিন্দু ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত এলাকায় আমরা পাহারা দিয়েছিলাম অগণিত কর্মীদের নিয়ে । সাথে প্রশাসনকে অবহিত রাখতাম তাদের সাথে সভা করে ও স্মারকলিপি দিয়ে । স্হানীয়ভাবে প্রায় সবরাজনৈতিক দলের নেতারাও এগিয়ে এসেছিলেন। বাবরী মসজিদ ইস্যু নিয়ে ১৯৯১ সালে আবারও দাংগা হামলা প্রতিরোধে আমরা প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে নিয়ে শান্তি মিছিল করি ১৫ দলীয় জোটের যৌথ উদ্যোগে এবং এতে ৭দলের পক্ষে তৎকালীন বিএনপি’র নেতা মন্ত্রীদেরকেও এতে আমরা নিয়ে এসেছিলাম । এভাবেদাংগাকারাীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দিয়েছিলাম, যদিও অনেক ঘটনা প্রশাসন বা আমরা বুঝতে পারারআগেই ঘটে গিয়েছিলো । অতএব, সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনগুলির যার যার অবস্থান থেকেসাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে কেউ না কেউ উদ্যোগ নিতে হবে । আমরা সেই সময় বলেছি আর এখনো বলছি, মসজিদে হামলাকারী, কোরআনের ও রাসুল (সাঃ) অবমাননাকারী, মন্দির ভাংচুর, বাড়িঘর লুন্টনকারীদের আমরা অন্তর থেকেই ঘৃনা করি, করে যাবো ।এরা সমাজ ও দেশকে ধ্বংস করতে এসব উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে করে যায় ।এসব ঘটনায় বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হতে পারে, তদন্ত ও বিচার এবং শাস্তি হতে হবে, তবে আইন হাতে নিয়ে নিরীহ মানুষের উপরএবং তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উপর হামলা করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের যেকোন ধরণের কাজসম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য । বাংলাদেশ বা ভারতে বা আর যেখানেই হোক না কেন কোথাও এদের প্রশ্রয় দেয়াযাবে না এবং এসব র্প্রতিটি ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়াটা প্রয়োজন । আমদের মনেরাখতে হবে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা করার বড় দায়িত্বের নির্দেশ ইসলাম ধর্মের মধ্যে আছে । এটাসবখানে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব । অন্য কেউ ব্যর্থ হলেও আমরা কেন ব্যর্থ হবো? সেই ব্যর্থতার জন্য অন্যত্র নিরীহ মানুষের উপর কেনহামলা হবে ? আমাদেরকে প্রমাণ করতে হবে আমরা প্রকৃত মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন মানুষ । একজন মানুষ বর্বর হলেভয়ংকর পশু বলেই তাকে গণ্য করা হয়। মানুষের মধ্যে এসব পশুদের থাকার অধিকার নেই । অতএব, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সচেতন দেশবাসী ছিলো সবসময় এগিয়ে, আজও আছে, থাকবে ইনশাআল্লাহ।

ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন, সাবেক ছাত্রনেতা ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠক।